ধাতু (Metals)

এসএসসি(ভোকেশনাল) - জেনারেল মেকানিক্স- ১ - জেনারেল মেকানিক্স -১ | | NCTB BOOK

যে সকল পদার্থের বিশেষ দ্যুতি আছে, আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা বিদ্যমান, পিটিয়ে পাতলা পাত বানানো যায়, টেনে সরু ও লম্বা করা যায়, আঘাত করলে বিশেষ ধাতব শব্দ হয় এবং তাপ ও বিদ্যুত সুপরিবাহী তাদেরকে ধাতু বলে। যেমন- লোহা, তামা, দা, সোনা, রূপা ইত্যাদি।

চিত্র-৩.১৭ বিভিন্ন ধাতুর ছবি

৩.৭.১ ধাতুর শ্রেণি বিভাগ (Metal and Classification of Metal ) 

ধাতুকে প্রধানত দু'টি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

১. ফেরাস ধাতু (Perrous Metal )- এর মধ্যে লোহা (Iron) থাকে।

২. নন-ফেরাস খাতু (Non-Ferrous Metal )- এর মধ্যে লোহা থাকে না।

ফেরাস ধাতু (Ferrous Metal)

(ক) স্টিল (Steel): লোহা ও কার্বন মিশ্রিত হয়ে স্টিল তৈরি হয়ে থাকে। কার্বন মিশ্রনের ফলে লোহার শক্ততা (Hardens) বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। স্টিলের সাথে নিকেল ধাতু ব্যবহারের ফলে স্টিলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।

i. স্টেইনলেস স্টিল (Stainless Steel): স্টিলের সাথে ক্রোমিয়াম ধাতু মিশ্রনের ফলে স্টেইনলেস স্টিল তৈরি হয়। লো-কাবর্ন স্টিলের চেয়ে এটি ২০০ গুণ মরিচা রোধী হয়ে থাকে। পাইপিং (Piping), সার্জিক্যাল (Surgical) ও ডেন্টাল (Dental) ইকুইপমেন্ট (Equipment) তৈরি করার জন্য স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার হয়ে থাকে।

ii. স্টেইনলেস স্টিল (Low Carbon Steel): লো-কার্বন স্টিলের মধ্যে ০ থেকে ০.২৫% পর্যন্ত কার্বন মিশ্রিত থাকে। একে মাইল্ড (Mild Steel) স্টিলও বলে। চাপের তারতম্য ঘটে এমন টিউবিং সিস্টেমে ব্যবহার হয়। এছাড়া রি-ইনফোসিং বার ( Reinforcing), আই-বিম (I- beams) ও কন্সট্রাকশন (construction) কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

iii. মিডিয়াম কার্বন স্টিল (Medium Carbon Steel) : মিডিয়াম কার্বন স্টিলের মধ্যে ০.২৫% থেকে ০.৬% পর্যন্ত কার্বন মিশ্রিত থাকে। একে মাইল্ড (Mild Steel) স্টিলও বলে। হাই টেনসাইল স্ট্রেস্থ এবং নমনিয়তা (Ductility) প্রয়োজনের জায়গায় এ ধরনের স্টিল ব্যবহার হয়। এছাড়া মেকানিক্যাল গিয়ার, শ্যাফট, রেলওয়ে হুইল (Railway Wheels) ও রেইল, স্টিল বিম (Beam), প্রেসার ভেসেল (Pressure Vessels) এবং বিল্ডিং-ব্রীজ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

iv. হাই কার্বন স্টিল (High Carbon Steel): স্টিলের মধ্যে কার্বনের পরিমান ০.৬% থাকলে তাকে হাই কার্বন স্টিল বলে। সকল ধরনের স্টিলের চেয়ে এটি বেশি শক্ত ও ভঙ্গুর। চিজেল (Chisel), কাটিং টুল তৈরিতে বেশি ব্যবহৃত হয়। হাই কার্বন স্টিল ক্ষয়রোধি বলে প্রেসে এবং ড্রিল বিট ব্যবহার হয়ে থাকে।

(খ) এ্যালয় স্টিল (Alloy Steel): স্টিলের সাথে নিকেল ও টাইটেনিয়াম মিশ্রিত করে এ্যালয় স্টিল তৈরি করা হয়। এতে ওজন বৃদ্ধি পায় না কিন্তু শক্তি, দুর্ভেদ্যতা, ঘাতসহতা বৃদ্ধি পায়। মেশিন টুলস ও ইলেকট্রিক্যাল এলিমেন্ট তৈরি করতে এ্যালয় স্টিল গুরুত্বপূর্ণ।

(গ) ঢালাই লোহা (Cast Iron): আয়রন ও কার্বন মিলেই ঢালাই লোহা তৈরি হয়। পানির পাইপ, মেশিন টুলস, অটোমোবাইল ইঞ্জিন তৈরিতে বেশি ব্যবহৃত হয়।

(ঘ) রট আয়রন (Wrought Iron): রট আয়রনকে খাটি লোহা বলা হয়। এতে কার্বনের পরিমান খুবই কম থাকে। এর কাঠিন্যতা ও ফেটিগ শক্তি খবুই কম। ইহা রেলিং (Railing), নেইল (Nail), তার (Wire), চেইন (Chain), অলংকার ও কৃষিসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

নন-ফেরাস খাতু (Non- Ferrous Metal )

নন-ফেরাস মেটালে আয়রনের পরিমান খুবই কম থাকে আবার অনেক ক্ষেত্রে থাকে না। এগুলো অর্ধ- পরিবাহী, অ-চুম্বকীয় এবং কম ওজন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।

(ক) অ্যালুমিনিয়াম (Aluminum): এটি খুব হালকা, নরম ও কম শক্তি বিশিষ্ট হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় (High-Temperature Environments ) অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার সুবিধাজনক নয়। খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণ, ফুড ক্যান (FoodCans) এবং উড়োজাহাজ তৈরিতে বেশি ব্যবহৃত হয়। এটিকে সংকরিত করে কাস্টিং এর মাধ্যমে পিস্টন, রেলওয়ে, গাড়ী ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

(খ) কপার (Copper): কপার ধাতুর রং অনেকটা লাল, খুবই নরম, সহজে গলে যায়, অধিক বিদ্যুৎ পরিবাহি ও তাপ পরিবহনাঙ্ক গুণ ভাল। বৈদ্যুতিক শিল্পে এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। শিট রুফিং, ব্রাস মেকিং ইত্যাদি কাজে বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

(গ) লিড (Lead): লিড খুবই নরম ধাতু তার পরেও লো-মেল্টিং পয়েন্ট, সহনশীল (Enduringness ) মজবুত (Heavy) গুণসম্পন্ন। এসিডের ক্ষয় করা থেকে রক্ষা করে। পাওয়ার ক্যাবল, বেটারী, বিল্ডিং নির্মাণ ও বন্ধন তৈরি (Fastening) এর কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়।

(ঘ) জিঙ্ক (Zinc): এটি কম শক্তি সম্পন্ন, লো-মেল্টিং পয়েন্ট বিশিষ্ট একটি ধাতু। গ্যালভানাইজিং কাজে এটির ব্যবহার ব্যপক। ইলেকট্রিক্যাল প্লেট তৈরির কাজে এটি প্রচুর ব্যবহৃত হয়। জিংক মরিচারোধী ধাতু। 

(ঙ) টিন (Tin): টিন অবিশ্বাস্যভাবে নরম এবং নমনীয়, কম সহনশীলতাসহ নমনীয়। এটি সাধারণত ক্ষয় রোধ করতে ইস্পাতের উপর কোটিং করতে উল্লেখযোগ্য। টিনপ্লেট ইস্পাত খাদ্য বহন করার জন্য টিনের ক্যান তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, টিনের ফয়েলে খাদ্য সামগ্রী মোড়ানো হতো। এখন বেশির ভাগই অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। ব্রাস ও ব্রোঞ্জ তৈরিতে তামার সাথে টিনের মিশ্রণ উল্লেখযোগ্য হারে ব্যবহার হয়।

(চ) ব্রাস (Brass): এটি পিতল, তামা ও দস্তার সংকর। এর কাঠিন্যতা এবং কার্যক্ষমতা গুণের কারণে ঐতিহাসিক এবং সমাদৃত। প্রাচীনতম পিতলকে বলা হয় ক্যালামাইন ব্রাস। 

(ছ) ব্রঞ্জ (Bronze): এটি কপারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংকর। পার্থক্য শুধু এটুকু যে, ব্রঞ্জে টিন থাকে কিন্তু জিঙ্ক থাকে না। এর গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য এতে ফসফরাস (Phosphorus), ম্যাঙ্গানিজ (Manganese), সিলিকন (Silicon), ও অ্যালুমিনিয়াম ( Aluminum) ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি শক্ত ও ভঙ্গুর, তাপ পরিবহন ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ক্ষয় রোধী সংকর ধাতু। ইহা আয়না (Mirrors), প্রতিফলক ( Reflectors), ইলেকট্রিক্যাল কান্টের ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। জাহাজ ফিটিংস-এ এবং সাবমার্জ পার্টস (Submerged Parts) তৈরিতে বিশেষভাবে ব্যবহার হয়।

(জ) টাইটানিয়াম (Titanium): টাইটানিয়ামকে ইঞ্জিনিয়ারিং এর মূল উপাদান/ধাতু বলা হয় কারণ এটি খুবই শক্ত ও হালকা ওজনের হয়ে থাকে। এর থার্মাল এবিলিটি খুবই ভাল, ৪৮০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এ্যারোস্পেস শিল্প, মিলিটারী যন্ত্রপাতি, মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট তৈরিতে বিশেষ ধাতু হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কেমিক্যাল ও খেলাধূলা সামগ্রী তৈরিতে প্রচুর ব্যবহৃত হয়।

(ঝ) কোবাল্ট (Cobalt): ইহা কপার ও নিকেলের সংকর। অধিক ক্ষয়রোধি বস্তু তৈরিতে কোবাল্ট ব্যবহার হয়।

(ঞ) নিকেল (Nickel); নিকেল পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটিতে উজ্জ্বল, সোনালি আভাসহ রূপালী সাদা রঙয়ের। নিকেলকে এর নমনীয় ও ক্ষয়রোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ধাতু। নিকেল দুটি আকরিক থেকে নিষ্কাশিত হয়ে থাকে।

(ট) টাংস্টেন (Tungsten) : একে সকল খাটি ধাতুর চেয়ে অধিক টেনসাইল স্ট্রেস্থ (Tensile Strength) ও গলনাঙ্ক (Melting Point) তাপমাত্রা বিশিষ্ট ধাতু বলা হয়। একারনেই প্রকৌশল কর্মকান্ডে এটি বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। টাংস্টেন কার্বাইড ধাতুর প্রায় ৫০% টাংস্টেন কার্বাইড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ইহা অধিক শক্ত গুণ সম্পন্ন হওয়ায় কাটিং টুল ও হেভী ( Heavy Equipment) ইকুইপমেন্ট তৈরি করার প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।

Content added || updated By
Promotion